দা কিচেন

অফিস থেকে ফিরেই ঝটপট ব্যাগটা রেখেই কিচেনে ঢুকে যায় তনু! ফ্ল্যাটমেট রিয়া তার পরে বাসায় ফেরে,তাই বেশির ভাগ দিন রান্নার দায়িত্ব তার কাঁধেই পরে। 

অন্যদিনের মতো আজকেও কিচেনে ঢুকে  আগে দেখে নেয় পানি আছে কিনা সিংক এ,  ভাত টা একটা চুলায় বসিয়ে তার পর ফ্রিজ খুলে পটল আর ঝিংগা  বের করে ধুয়ে দ্রুত কেটে ফেলে। পেঁয়াজ মরিচ কাটতে কাটতেই ভাতের বলক চলে আসে।

ভাত টা মাড় ঝড়াতে  বসাতে বসাতেই মনে হয় শিহাবের কথা। বাসায় ফিরে শিহাবকে একটাও ফোন করা হয়নি দেখে নিজের উপড় বিরক্ত হয়ে শোবার ঘরে ফোন নিতে ঢুকতেই কেমন মাথাটা ঘুরিয়ে ওঠে তনুর। ধাতস্থ হয়ে দেখে শিহাব বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। তনুকে দেখেই জিজ্ঞেস করে ‘তোমার বিরিয়ানি হতে আর কতক্ষন লাগবে? প্রচন্ড খিদে পেয়েছে তনু!!!’ 

তনু কোনো উত্তর না দিয়ে ঘরটাকে দেখতে থাকে,  গতো ৫ বছর ধরে আস্তে আস্তে গড়া তাদের ঘর! এইতো দেয়ালে তার আর শিহাবের বিয়ের ছবি। হুটহাট করে সম্ভবত তার কোনো একটা ট্রমা হয়েছিলো,তাইতো ৫ বছর আগে ফেলে আসা ফ্ল্যাটের স্মৃতি চোখের সামনে চলে এসেছিলো! 

‘আর মাত্র ১০ মিনিট পর খাবার টেবিলে এসো ‘ বলে তনু কিচেনে ফিরে যায়। বিরিয়ানি নামিয়ে সুন্দর ট্রে তে করে খাবার সাজিয়ে টেবিলে রাখে, ফ্রিজ থেকে কোক আনে, গ্লাস নিয়ে কিচেন থেকে বের হতে হতেই আবার সেই মাথা ঘোরা! রিয়ার উচ্ছসিত কন্ঠ শুনে ঘোর ভাংগে তনুর!  রিয়া চিৎকার করে বলছে’ ওয়াও আপু! তুমি বিরিয়ানি রান্না করছো???

জানো আমার আজ দুপুর থেকে বিরিয়ানি খাইতে কি যে ইচ্ছা করতেছিলো!! থ্যাংকিউ আপু!!! ‘ তনু হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, কারন এটা ৫ বছর আগের ঘটনা নাকি সে ৫ বছর পরের সময়ে চলে গিয়েছিলো সে মেলাতে পারেনা!!!

বিরিয়ানির বোল টা খাটের উপর রেখে সে ফোনটা হাতে নেয়, কাঁপা কাঁপা হাতে শিহাব কে কল দেয়। ৩ বার রিং বাজার পর শিহাবের কন্ঠ ভেসে আসে তনুর কানে…. 

দেখো তনু, ৫ বছর আগেই আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে! হুটহাট তোমার এই ধরনের ফোন আমার সাংসারিক জীবনে ঝামেলা করে! তুমি এমন করতে থাকলে আমি তোমার নাম্বার ব্লক করবো! প্লিজ আমাকে আর কল দিওনা!!! ‘ 

ফোন কেটে যায়! তনু দেখে তার পাশে বসে রিয়া পটল আর ঝিংগা  ভাজি দিয়ে ভাত খাচ্ছে আর বলছে

‘আপু তুমি কিচেন থেকে প্লেটটা আনার সময় দেখোতো ফ্রিজে কোকের বোতলটা আছে কিনা? 

প্রচন্ড ঘোর লাগা অবস্থায় তনু কিচেনের দিকে যায়, ফ্রিজ খুলে দেখে ফ্রিজে ব্ল্যাকফরেস্ট কেক এর অর্ধেক… কেকের গায়ের লেখাটা পড়া যাচ্ছে এখনো… 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *